প্রথমেই বলে নিচ্ছি, বিজ্ঞান সম্পর্কে আমার জ্ঞান খুবই সীমিত। তবুও যতটুকু জানি, সেটুকুর মাধ্যমেই অনেকভাবে ইসলামের সাথে বিজ্ঞানের একটা সম্পর্ক লক্ষ্য করি। জানিনা কেন কিন্তু মাথায় চিন্তা চলে আসে। তেমনি একটা ব্যাপার নিয়ে আজ লিখছি...এক যুগ আগে একটু ফিরে যাই,
"বিজ্ঞান সম্পর্কে ক্ষুদ্র জ্ঞান মানুষকে নাস্তিক করে তুলতে পারে কিন্তু বিজ্ঞান সম্পর্কে অধিক জ্ঞান মানুষকে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসে বাধ্য করে"— ২০১৩ সালের শেষের দিকে ডা. জাকির নায়েকের কোনো একটা বক্তৃতায় এমন একটা লাইন শুনেছিলাম। তখন তাঁকে একেবারেই চিনিনা, তখনই মূলত প্রথম নাম শুনি। মানুষের বিভিন্ন কৌতুহলী প্রশ্নের উত্তর দেন, এর বেশি জানার চেষ্টা করিনি বা আগ্রহ তৈরি হয় নি বা সুযোগও হয় নি তখন। শুধু অবাক হতাম, এত জ্ঞানী কীভাবে হতে পারে? এত এত বিদঘুটে প্রশ্নের এত প্রাঞ্জল ও সাবলীল উত্তর কীভাবে দিতে পারেন? ইশশ, আমিও যদি সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতাম!
২০১২ সালের শেষদিক থেকে নামাজ পড়া শুরু করেছি কেবল, একটু একটু ইসলাম সম্পর্কে জানা শুরু করেছি বলা যায়। তবে বাবা-মায়ের কথাতে নয় বরং নিজের একান্ত ইচ্ছাতেই কারণ তার আগে আমি শুধুমাত্র জুমুয়ার নামাজ পড়তাম এবং সেটাও বাধ্য হয়ে বাবার ভয়ে। তখন কিছু একটা ঘটনা (কখনো বলা সম্ভব নয়) ঘটে এবং আমার ধারণা সেটাই আমার হেদায়াতপ্রাপ্তির কারণ/সূচনাকাল। নামাজ পড়তে চাইতামই না কিন্তু তারপর একদম লুকিয়ে লুকিয়ে নামাজ পড়ে আল্লাহর সাহায্য চাইতাম এবং অতি শীগ্রই পেয়েও যেতাম। তারপর থেকে ধীরে ধীরে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে আমার আশপাশ থেকে যেভাবে যতখানি জানতে পারি, যথাসম্ভব সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।
আল্লাহর রহমতে ২০১৪ সালের দিক থেকে গণিতের প্রতি অসম্ভব আগ্রহ থেকে নবম শ্রেণিতে গিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ নিলাম। কিছুদিন পরই প্রকৃতির রহস্য অনুসন্ধান করা থেকে পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেল। এমন অবস্থায় গেল যে মনে হল বিজ্ঞানী হয়েই যাব (পরে বুঝেছি, সম্ভব নয়, এতও সহজ নয় আসলে)। চারিদিকে সদা সর্বদা কথাবার্তায়, চিন্তাচেতনায় কীভাবে যেন বিজ্ঞান ও গণিত চলে আসত, এতই ডুবে ছিলাম! যাই হোক, আল্লাহর কাছে অসংখ্য শুকরিয়া, ভালো কোনো কিছুতে এত আগ্রহ দান করেছেন। ভুল করার বয়সে সম্ভবত কোনো ভুল করিনি। কেন করেছেন? আমি কী করেছি? জানিনা। আল্লাহ যতটুকু চেয়েছেন, ততটুকু দিয়েছেন। তবে একটু ব্যাখ্যা করতে পারি কারণ আমার সকল ঘটনায় আল্লাহর ইশারা টের পাই, সেসব নিয়ে অন্য একদিন লিখব হয়ত। মূল প্রসঙ্গে আসি...
এইচএসসিতে পদার্থবিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রে 'আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সূচনা¹' অধ্যায় পড়ার পর ২০১২-২০১৮ সালের কিছু ঘটনা মনে পড়ে গেল। সব লিখার মত সময় হয় নি এখনো। মহানবী (সাঃ) এর মেরাজের ঘটনা সম্পর্কে ইতিপূর্বে জেনেছি। পৃথিবীতে মাত্র এক রাতের মধ্যে কীভাবে তিনি মহাবিশ্বের এত বিশাল পথ পাড়ি দিয়ে এলেন? শুরুতে প্রশ্নটি আমারও ছিল কিন্তু উত্তর খোঁজার চেষ্টা না করেই বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম। সেই বিশ্বাসে কোনো ঘাটতি ছিল না। আইন্সটাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সময় সংকোচনের ব্যাপারটা জেনে ভাবলাম, মেরাজে এমন কিছু একটা হলেও হতে পারে। বিশ্বাসটা আরও সুদৃঢ় হল। পরে ২০২১ সালের দিকে যখন আরেকটু বড় হলাম, বিজ্ঞান সম্পর্কে আরও স্বচ্ছ ধারণা পেলাম, তখন আমি দিনের আলোর মত যেন স্পষ্ট আল্লাহর নিদর্শন দেখতে পেলাম। সাধারণ মানুষের জন্য উপযোগী করে বলছি, 'আলোর² বেগের খুব কাছাকাছি গতিশীল কোনো রকেটে কেউ মহাকাশ ভ্রমণে গেলে, তার কাছে সময় অতিবাহিত হবে না বললেই চলে।' তো মহানবী (সাঃ) এর মেরাজের ক্ষেত্রেও এমন কিছু একটা হলেও হতে পারে অথবা অন্য কিছু হলে আমি আপাতত জানিনা। তার মানে, আমাদের বর্তমান বিজ্ঞান দিয়ে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে মেরাজ অবশ্যই সম্ভব! কত তারিখে মেরাজ হয়েছে সেটি জানা যায় না কিন্তু ঘটনার সত্যতা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই।
আলোর বেগের কাছাকাছি গতিশীল অবস্থায় সময় ধীরে অতিবাহিত হওয়ার ব্যাপারটি এখন প্রমাণিত। রকেটের ক্ষেত্রে না হলেও ইলেকট্রন দ্বারা LHC (Large Hadron Collider) তে সেটি প্রমাণিত। LHC সুইজারল্যান্ড ও ফ্রান্সের সীমান্তবর্তী এলাকায় ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৭ কি.মি. গভীরে অবস্থিত একটি উন্নত গবেষণাগার। এটির কথা আমি যখন প্রথম শুনি, তখন আমি বিজ্ঞানের 'বি'-ও জানিনা।
বিটিভিতে ২০১৩-১৪ সালের দিকে প্রতি মঙ্গলবার বিকাল তিনটায় 'মহাবিশ্বের পথে পথে' নামক একটি অনুষ্ঠান হত। সেই অনুষ্ঠানের পর ফেরদৌস বাপ্পীর সেই জনপ্রিয় 'কুইজ কুইজ' অনুষ্ঠান হত। আমি কুইজ কুইজের জন্য অধীর আগ্রহে প্রতি সপ্তাহে অপেক্ষা করতাম। কোনো একদিন হয়ত কোনো কারণে একটু আগে টিভি চালু করেছিলাম, তখন মহাবিশ্বের একটি অনুষ্ঠান হয় এবং দেখি। চন্দ্র, সূর্যের প্রতি আগ্রহ/কৌতুহল প্রায় সব শিশুরই থাকে। আমারও তাই, সেখান থেকে কিশোর বয়সেও এসে আগ্রহ কমে নি বরং বেড়েছে। মহাবিশ্ব সম্পর্কিত অনুষ্ঠান দেখে দেখতে শুরু করি এবং অনেক ভালো লাগে। তারপর থেকে নিয়মিত এই দুটি অনুষ্ঠানই দেখতাম। অনেক কিছু শুনেছি, দেখেছি, কিছু বুঝিনি, মনেও নেই কিন্তু তখন প্রচণ্ড ভালো লেগেছিল। তেমনি এই অনুষ্ঠানেই প্রথম LHC ল্যাবরেটরির কথা শুনি। যদিও কিচ্ছু বুঝিনি কিন্তু মাটির এত নিচে কীভাবে বানাল, সেটি আমার কাছে বিস্ময়কর ছিল এবং সম্ভবত সেই কারণেই মনে ছিল।
জান্নাতে মানুষের বয়স বাড়বে না, এটা এখন এভাবে ব্যাখ্যা করতে পারিঃ সমগ্র জান্নাত যদি আলোর বেগে গতিশীল থাকে, তাহলেই তো সেখানে কোনো সময় অতিবাহিত হবে না। আলোর বেগে গতিশীল কাঠামোতে সময় স্থির থাকে³। এখন এত বেগে চলমান অবস্থায় আমরা কি স্থিতিশীল থাকতে পারব? পৃথিবী যদি সেকেন্ডে প্রায় ৩০ কি.মি. বেগে ঘোরার পরও আমরা স্থিতিশীল থাকতে পারি, সেখানে কেন নয়? পরকালের সময় নিয়ে ব্যাপারগুলো এভাবেই ব্যাখ্যা করা যায়।
আচ্ছা, ভুল ব্যাখ্যা করা যাবে না। কারো কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে সাদরে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আল্লাহ জান্নাতে সময়কে এভাবে নাকি কীভাবে স্থির রাখবেন, সেটা আল্লাহই ভালো জানেন। কিন্তু বর্তমান বিজ্ঞান দিয়ে আমরা অন্তত অনুমান করতে পারি, এমন হলেও হতে পারে।
বিজ্ঞান নিয়ে কিছু জানার আগেই আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি, যথাসম্ভব মেনে চলেছি। বিজ্ঞান আমাকে এক মুহুর্তের জন্যও মনে নাস্তিকতার বিন্দুমাত্র চিন্তার অবকাশও তৈরি করতে পারে নি বরং বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে জানতে মনে হচ্ছে আমি আরও আল্লাহর কাছাকাছি চলে যাচ্ছি। ডা. জাকির নায়েকের সেই উক্তিটি আমি তখন বুঝতে পারি নি কিন্তু করোনা ভাইরাসের অবরুদ্ধ সময়ে একাকী অনেককিছু ভাবতে ভাবতে একসময় বুঝতে পারি। মেডিক্যাল সাইন্স নিয়ে পড়লে সম্ভবত ইসলামের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক আরও অনুধাবন করতে পারতাম। মাঝেমাঝে ইন্টারনেট থেকে পড়ে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমের সাথে আল্লাহর আদেশ নিষেধের এত এত সামঞ্জস্য দেখে পরম তৃপ্তিতে আলহামদুলিল্লাহ পড়ি।
এককথায় সারাজীবনের জন্য, কুরআনে যা আছে, তা চিরসত্য। বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে না পারলে তা বিজ্ঞানের ব্যর্থতা, বিজ্ঞান সেসব বোঝার জন্য এখনো ততটা উন্নত হয় নি, বিজ্ঞানকে আরও উন্নত হতে হবে। এমনকি বিজ্ঞানের বর্তমান কিছুও ভবিষ্যতে ভুল⁴ প্রমাণিত হতে পারে কিন্তু কুরআনের কিছু নয়। সময় সংকোচনের ব্যাপারটি বিজ্ঞান খুব বেশি হলে মাত্র ২০ বছর আগে প্রমাণ করতে পেরেছে। প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বে আল্লাহ মেরাজের ঘটনা ঘটিয়েছেন। তখনকার বিজ্ঞানের অবস্থা কি ভাবা যায়? কে জানে, দূর ভবিষ্যতে বিজ্ঞান আরও কত উন্নত হবে! তাই ইসলামের যেসব বিষয় এখনো বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত নয়, সেসবও একসময় প্রমাণিত হলেও হতে পারে। হোক বা না হোক, আমরা মুসলমান মাত্রই কুরআনের সকল কিছু অকপটে বিশ্বাস করে নিলাম।
টীকাঃ
1. এই অধ্যায়ে আইন্সটাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব, সময় সংকোচন, এক্স-রে, ফটোইলেকট্রিক ক্রিয়া ইত্যাদি আধুনিক আবিষ্কার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
2. আলোর বেগ সেকেন্ডে তিন লক্ষ কি.মি. অর্থাৎ আলো এক সেকেন্ডে তিন লক্ষ কি.মি. দূরত্ব অতিক্রম করে। সহজভাবে, আলো এক সেকেন্ডে পুরো পৃথিবীর চারিদিকে সাতবার (প্রকৃত অর্থে ≈7.4) ঘুরে আসতে পারবে।
3. কেউ বলতে পারে, আলোর বেগে গতিশীল হলে গতিশীল দৈর্ঘ্য শুণ্য হয়, ভর অসীম হয়, তাহলে এর ব্যাখ্যা কী?
দৈর্ঘ্য শুণ্য হবে মানে বাইরে থেকে (স্থির প্রসঙ্গ কাঠামো) কেউ পরিমাপ করলে শুণ্য পাবে, প্রকৃতপক্ষে তার কাছে মনে হবে বা দেখবে, শুণ্য হয়ে যায় এমন নয় আসলে। আর গতিশীল কাঠামোর কেউ যদি দৈর্ঘ্য পরিমাপ করে, তবে কিন্তু নিশ্চল দৈর্ঘ্যের সমানই পাবে কারণ এক্ষেত্রে v=0 (আপেক্ষিক বেগ)।
গণিতে অসীম মানে স্বাভাবিক তুলনীয় সাপেক্ষে অনেক বড় মানকে বোঝায়। জান্নাতে মানুষের আকৃতি বড় হবে, তো ভরও বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। অসীমের কোনো নির্দিষ্ট মান নেই।
4. নিউটনের গতি সূত্রসমূহ আলোর বেগে কাছাকাছি গতিশীল বস্তুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, সেসব ক্ষেত্রে আপেক্ষিকতা তত্ত্ব ব্যবহার করতে হয়। তাই এক্ষেত্রে নিউটনের সূত্র ভুল বলা যায়। বিজ্ঞান উন্নত হওয়ার ফলে মাত্র একশো বছর আগে এই ভুলটা ধরা পড়ে।
Comments
Post a Comment